পাখির মত লাফিয়ে পড়তে দেখেছি!’

ডেস্ক রিপোর্ট – আমার জীবনে এমন দেখিনি, জীবন বাঁচাতে পাখির মত লাফিয়ে পড়ে চোখের সামনে মানুষ মরা বা পঙ্গু হওয়া দেখিনি কখনও। থেমে থেমে ৮ থেকে ১০ জনের দল লাফিয়ে পড়ছিল। পাখির মত মরতে দেখেছি চোখের সামনে।’ বলতেই কেঁদে ফেলেন এফ আর টাওয়ারের ৩ ভবন পর কর্মরত প্রত্যক্ষদর্শী জামান।

রাজধানীর বনানী এফ আর টাওয়ারে আগুন! শুনেছি ভেতরে আটকে পড়া মানুষের বাঁচতে চাওয়ার আকুতি। নিস্তব্ধ করেছে নিচে থাকা হাজারো মানুষের মন। নিচ থেকে কেউ কান্না জড়িত কণ্ঠে আবার কেউ আল্লাহু আকবর আল্লাহ আকবর ধ্বনিতে লাফিয়ে না নামার আকুতি জানান আটকে থাকাদের।

নিচে অপেক্ষারত স্বজনদের আর্তনাদে স্তব্ধ পুরো বনানী। স্বজনকে জীবিত ফিরে পেতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে।

রুবেল নামের একজন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার বোন সুফিয়া এখানে চাকরি করেন। জানি না কোথায় আছে, কেমন আছে। টিভিতে দেখে বোনকে ফিরে পেতে ছুটে এসেছি উত্তরা থেকে। আল্লাহ জানেন কেমন আছে বোন আমার। হে আল্লাহ তুমি আমার আদরের বোনটাকে রক্ষা করো’

তিনি আরো বলেন, ‘বড় বোন সংসারের হাল ধরতেই আজ নিজের জীবন ঝুকিতে ফেলেছেন। আল্লাহ তুমি বোনকে ফিরিয়ে দাও।’

ভবনের ভেতরে আটকে পড়া বহু মানুষ জীবন বাঁচাতে তার বেয়ে, পাইপ বেয়ে কেউ বা আবার লাফিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। আবার কারো হয়েছে মৃত্যু। জীবন বাচাঁতে যারা কোনো কিছু না ভেবেই লাফিয়ে পড়লেন, তারা কি একটি বারও ভাবেননি হয়তো আজই শেষ দিন? আবার কেউবা ভেবেছেন পঙ্গু হলেও অন্তত; বেঁচে তো থাকতে পারবো।

বাইরে থাকা মানুষ এখনো তাদের কান্নার শব্দ ও বাঁচার আকুতি নিরবে দেখছেন। কিন্তু নিরুপায় সবাই।

এদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি যোগ দিয়েছে পুলিশ, বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সঙ্গে আছেন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ভবনে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার যোগ দিয়েছে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ছাদ থেকে নামিয়ে নিচ্ছেন আটকে থাকাদের।

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফিন আহমেদসহ তার সহপাঠিরা বলেন, চোখের সামনে দেখলাম বাঁচার জন্য লাফ দিয়ে কি করে মানুষ পড়ে মরেছে। যারা বাঁচার জন্য লাফ দিয়েছেন, তারা হয়তো জীবিত নেই। কারণ তারের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে ছিটকে পড়েছে।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসি বিভাগের শিক্ষার্থী নিজাম বলেন, ‘এক মা তার ৫ থেকে ৬ বছরের ছোট সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে লাফ দেন। অষ্টম বা নবম তলা থেকে লাফ দেন তিনি। নিজের চোখে দেখলাম বাচ্চাটা স্পট ডেট। বাচ্চাটির পেটে কাচ লেগে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কলিজা ফেটে যাচ্ছে দৃশ্যটা মনে হলে। চোখের সামনে ১৫ থেকে ২০ জনকে পড়তে দেখেছি। নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সহযোগিতা করতে।

তিনি আরো বলেন, ‘তারা বেঁচে ফিরবে বলে মনে হয় না। কেউ লাফিয়ে কেউ রশি বেয়ে আবার মইয়ের সাহায্যে নামতে গিয়ে কেউ প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তবে সবাই আহত পঙ্গু অবস্থায়।’ 

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে লাগা আগুন এখন পর্যন্ত পুরো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। তবে ফায়ার সার্ভিস টানা ৬ ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

এফ আর টাওয়ারের একটি সূত্র জানায়, সম্ভবত ভবনের ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে কি কারণে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো জানা যায়নি।

এখন পর্যন্ত মৃত্যুর খবর সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।